মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ, লালমনিরহাট:
দীর্ঘদিনের মানব দুর্ভোগের অবসান আর ভাগ্যের চাকা সচল করতে লালমনিরহাট জেলা সদর হতে মাত্র ৩কিলোমিটার দুরের লালমনিরহাটের কুলাঘাট ইউনিয়নের শিবেরকুটি গ্রামের রত্নাই নদীর সরেয়ারতলের ঘাট ও ময়দানের ঘাটে দুটি ব্রীজ নির্মাণে জোড়ালো দাবি তুলেছে সেখানকার ৪টি গ্রামের মানুষ।
আর এতে করে দেরীতে হলেও মানবাধিকারের মুলস্রোতে যুক্ত হবার সুযোগ ঘটবে এলাকাগুলোর নানা সুবিধাবঞ্চিত প্রায় ১৪হাজার মানুষের।
লালমনিরহাট জেলা সদরের সর্ব পূর্বের ওই ইউনিয়নটি নদী বেষ্টিত জনপদ যা চরাঞ্চল নামে পরিচিত।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা কার্যালয় থেকে মাত্র ৩কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কৃষি ও মাছে সমৃদ্ধ ওই এলাকাটি পিছিয়ে শুধু অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে।
এখানকার বাসিন্দারা প্রধানত ২টি স্থান দিয়ে যাতায়াত করেন। একটি “সরেয়ারতলের ঘাট” হয়ে ধাইরখাতা, আরেকটি “ময়দানের ঘাট” হয়ে ভিতরকুটি বাঁশপচাই বিলুপ্ত ছিটমহল।
যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও সময়মতো পৌঁছতে পারে না। অথচ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে এখানে চরে গড়ে উঠতে পারে পর্যটন কেন্দ্র। কৃষিতে আসবে আরও সমৃদ্ধি। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এখানে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না। দূরের স্কুলে গিয়ে শিশুরা লেখাপড়া করে। নদীর উপর ব্রীজ ২টি হলে পাল্টে যাবে সেখানকার জনসাধারণের জীবনচিত্র।
এলাকাবাসী জানায়, শিবেরকুটি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে রত্নাই নদী। নদীর এপারে ৪টি (বনগ্রাম, শিবেরকুটি, দক্ষিণ শিবেরকুটি, বোয়ালমারী) গ্রাম আর ওপারে ভাটিবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, কুলাঘাট উচ্চ বিদ্যালয়, লালমনিরহাট আদর্শ ডিগ্রি কলেজ, পূর্ব সাপটানা উচ্চ বিদ্যালয়, লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, লালমনিরহাট সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, মজিদা খাতুন সরকারি মহিলা কলেজ, লালমনিরহাট সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট- বাজার, লালমনিরহাট সদর ও জেলা শহর।
এপারের ৪টি গ্রামের অনেক শিক্ষার্থী ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে। কৃষককে উৎপাদিত ফসল নিয়ে কিংবা রোগীকে চিকিৎসার জন্য ছুটতে হয় নদীর ওপারে। তাঁদের এই যাতায়াতের একমাত্র প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে রত্নাই নদী।
শিবেরকুটির বাসিন্দা ও রূপালী ব্যাংকের ম্যানেজার রশিদুল হক বলেন, বাঁশের সাঁকোতে প্রতিদিন পারাপার হয়েই উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেছি। এখন চাকুরি করছি। এত দিনেও এই জায়গা দুটিতে সেতু নির্মিত না হওয়া সত্যি দুঃখজনক।
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব মোঃ রমজান আলী বলেন, শিকেরকুটির সরেয়ারতল ঘাট এলাকার রত্নাই নদীর দুই পাড়েই পাকা সড়ক রয়েছে। এখন শুধু সেতু দরকার। বর্ষায় নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে অথবা ছোট নৌকা বা ভেলায় করে ভরা নদী পারাপার হতে ভয়ে থাকতে হয়। বিশেষ করে রাতের বেলা এ নদী পার হতে সবাই আতঙ্কে থাকে, কখন কে নদীতে পড়ে যায়।
কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বলেন, উপজেলা মাসিক উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় রত্নাই নদীর শিবেরকুটি সরেয়ারতল ঘাট সেতু নির্মাণের বিষয়টি একাধিকবার উপস্থাপন করা হলেও সেতু নির্মাণ না হওয়ায় শিবেরকুটিসহ নদীর এপারের ৪টি গ্রামের ১৪হাজার মানুষকে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সব মিলে এলাকাবাসীর দাবিকে বিবেচনায় নিয়ে অবহেলিত পশ্চাতপদ এ এলাকাটিকে এগিয়ে নিতে ওই সেতু ২টি নির্মাণে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখনই এগিয়ে আসা জরুরী বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্টজন।